ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ: পবিত্র কুরআনের আলোকে পর্যবেক্ষণ (The Five Pillars of Islam: Observations in the Light of the Holy Quran)
Creators
- 1. Chairperson, Center for Academic & Professional Career Development and Research (CAPCDR)
Description
পটভূমি
আমার নানা একজন সম্মানিত মাওলানা ছিলেন এবং অসুস্থ মা-কে কোনদিন দেখি নাই কোন সালাত কাযা করতে, তাই আমি পারিবারিক ভাবে সুন্নি মাজহাবের মানুষ। এই মাজহাবের কেউ আমার শত্রু নয়। তবে মহান আল্লাহ আমাকে যতটুকু জ্ঞান দিয়েছেন তা অপব্যবহার না করে, একজন একাডেমিক স্বীকৃত গবেষক হিসাবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পবিত্র কুরআন নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করার চেষ্টা করি। সেই ক্ষেত্রে আমার চিন্তা, গবেষণা ও লেখায় ভুল থাকতে পারে, যা নিতান্ত-ই স্বাভাবিক। আশাকরি মহান আল্লাহ সেই ভুলের জন্য ক্ষমা করবেন এবং কারো দৃষ্টিতে কোন ভুল দেখা গেলে আমাকে অবহিত করা হলে (ইমেইল এর মাধ্যমে) আমি নিজেকে সংশোধন করে নিব এবং এই লেখাকে পুনঃসংস্করণ করব, ইনশাআল্লাহ (যদি বেঁচে থাকি) ।
জন্মের পর থেকেই শুনেছি ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ অর্থাৎ কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব ও যাকাত। জীবিকার জন্য যে শিক্ষা আমরা অর্জন করি তার ক্ষেত্রে আমরা যেভাবে পড়াশুনা করি, তেমন করে কোনদিন পবিত্র কুরআন পড়াশুনা করি নাই, তাই এই পাঁচ স্তম্ভ সহ সামগ্রিক পবিত্র কুরআন সম্পর্কে রয়েছে জ্ঞানের বিশাল শূন্যতা। ফলে এই শূন্যস্থান পূরণ করে দিচ্ছে আমাদের চিরশত্রু শয়তান এবং তার দলবল। ইসলামের এই পাঁচ স্তম্ভকে নিয়ে অধ্যায়ন করতে করতে তেমনিটি-ই অনুধাবন করছি, তাই এই প্রকাশনার উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেকে সংশোধন করার এবং খুব সহজে একজন মানুষ বুঝতে পারেন সেই ব্যবস্থা।
প্রথমেই এই পাঁচ স্তম্ভের ধারণার সাথে কঠিন আপত্তি করছি অর্থাৎ ইসলামের স্তম্ভ পাঁচিটি নয়, তা কেবলমাত্র একটি তা হচ্ছে মহান আল্লাহর পবিত্র কুরআন। এই কিতাবের একটি শব্দ-কে অমান্যতো দূরের সন্দেহও করা যাবে না। তাই ইসলামের একমাত্র স্তম্ভ হচ্ছে পবিত্র কুরআন। যাই হউক বহুল প্রচলিত এই পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে প্রথমেই আসে ঈমান। ঈমান আনার জন্য মুখে কলেমা পড়তে হয় এবং অন্তরে তা বিশ্বাস করতে এটা-ই প্রচলিত রীতিনীতি। এই নীতিতে পাঁচটি বর্তমানে আরো ২টি বেড়ে মোট সাতটি কলেমা এবং ২টি ঈমানের বাক্য রয়েছে, যা বিশ্বের বিখ্যাত ও অখ্যাত সকল ধর্ম প্রচারকগণ প্রচার করছেন এবং সেই অনুযায়ী-ই ভিন্ন ধর্মের মানুষকে মুসলিম হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এখানে প্রথম অধ্যায়: ঈমান, কলেমা ও ঈমানদার: পবিত্র কুরআনের আলোকে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। মূল কথা হচ্ছে ৭টি বাক্য পবিত্র কুরআনের কোথাও তার যেমন কোন অস্তিত্ত্বতো নেই তেমনি তা পবিত্র কুরআনের নীতি বিরুদ্ধ, সাংঘর্ষিক এবং পবিত্র কুরআনের সাথে যুদ্ধ ঘোষণার সামিল। তাই আমি নিজে এই (৭+২) অর্থাৎ ৯টি বাক্যকে ইসলামের কলেমা ও ঈমান হিসাবে প্রত্যাখ্যান করলাম এবং ইসলামের বিশ্বজনীন কলেমা (২:১৩৬) ও (৩:৮৪) কে পাঠ করে পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত সকল কলেমাকে-ই ঈমান ও জীবন হিসাবে মেনে নিলাম, মহান আল্লাহ যেন কবুল করেন। তাছাড়া আমি সেখানে যে ৫৩২টি আয়াতের কথা উল্লেখ করেছি, তাই শেষ কথা নয় অন্যের গবেষণায় তা তারতম্য হতে-ই পারে।
প্রচলিত দ্বিতীয় স্তম্ভের যে নামাজ রয়েছে তা কখনও পবিত্র কুরআনে বর্ণিত সালাতের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে কোথাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এভাবে পাঁচ বার ১৭ রাকাত বাধ্যতামূলক সালাতের বিধান দেন নাই। সালাত (নামায) শব্দটি পবিত্র কোরআনে সরাসরি ৮৯ টি আয়াতে ৯৬ বার, আর আলাদা আয়াতে তাহাজ্জুদ ১ বার, রূকু-সেজদা ১ বার, দন্ডায়মান ১ বার এবং তাসবীহ ৩ বার অর্থাৎ মোট ১০২ বার এসেছে। সেখানে ৯৫টির অধিক চলক রয়েছে এবং এই চলকের সমষ্টি-ই হচ্ছে সালাত আর সালাত কায়েম হচ্ছে ঐ সকল চলকগুলিকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ। তবে শারীরিক সালাতের যে বিবরণ উল্লেখ করেছেন তাতে সর্বনিম্ন রাকাত হচ্ছে একটি (১) যারা সালাত পড়বেন এবং যিনি পড়াবেন তার জন্য ২ রাকাত সুনির্দিষ্ট সালাতের সময়ে, তবে সর্বোচ্চ রাকাতের কোন সীমাবদ্ধতা মহান আল্লাহ নির্ধারণ করে দেন নাই। তাই প্রচলিত সালাতের বিধিবদ্ধ রীতিনীতি বর্জন করতে বাধ্য হয়েছি। আশা করি দ্বিতীয় অধ্যায়: "পবিত্র কুরআন অনুযায়ী সালাত (নামাজ) পদ্ধতি" গবেষণা প্রবন্ধটি নিরপেক্ষতা বজায় রেখে এবং মনযোগের সহিত পাঠ করলে সহজে-ই বুঝতে সক্ষম হবেন।
তৃতীয় অধ্যায়: "যাকাতের প্রচলিত পদ্ধতি বনাম পবিত্র কোরআন: দাতা ও গ্রহীতার একটি আর্থ-সামাজিক মডেল" এই গবেষণা প্রবন্ধটি ৪০টি মুসলিম প্রধান দেশের সমসাময়িক তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফলাফলে দেখা গেল যে সকল দেশ-ই পবিত্র কুরআনের মূলনীতি বহির্ভুত পন্থায় যাকাতের বিধি-বিধান ও প্রথায় বিশ্বাসী। প্রচলিত পদ্ধতিতে যাকাতের ক্ষেত্রে রয়েছে সর্বনিম্ন পরিমান (নিসাব) ও হার ২.৫%। এই দুটি মৌলিক উপাদান, যার অস্তিত্ব পবিত্র কুরআনের কোথাও উল্লেখ নেই। তাছাড়া দেখা যাচ্ছে যে, যাকাতকে কেবলমাত্র অর্থনৈতিক বিবেচনায় সকল প্রকার ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে, অর্থাৎ সামাজিক দিকটি সম্পূর্ণভাবেই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আরো দেখা যায় যে, কিছু কিছু দেশ সরকারি ভাবে এই যাকাত আদায় করে এবং ব্যয় করা হয় পবিত্র কুরআনের অন-অনুমোদিত উপায়। উপরন্ত, বর্তমান মুসলিম বিশ্বে মাযহাবের দ্বন্ধে যুদ্ধের মত ধ্বংসাত্মক পথে জড়িত হয়ে গেলেও, যাকাতের ব্যাপারে এক মাযহাবের অনুসারী। এখানে উল্লেখ যে পবিত্র কুরআনের ফসল কাটার নীতি ও খুমুস (যা হচ্ছে লভ্যাংশের ১/৫) নীতি যাকাত গ্রহণকারী শ্রেণী চিহ্নিত করা হলেও, বাস্তবে যাকাত বা ভিন্ন কোন উপায়ে ঐ শ্রেণীর মধ্যে এই ধরণের কোন বন্টনের ব্যবস্থাও নেই। মূলত একাদশ শতাব্দী মতান্তরে অষ্টাদশ শতাব্দীর সংকলিত বিভিন্ন লাহওয়াল হাদিস থেকে যাকাতের বিধিবিধান প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্ৰচলিত চতুর্থ ও পঞ্চম স্তম্ভকে একই সাথে চতুর্থ অধ্যায়: হজ্জ্ব ও সিয়াম (রোজা): পবিত্র কুরআনের আলোকে এই শিরোনামে আলোচনা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন অনুযায়ী উভয় ক্ষেত্রে নির্ভরশীল চাঁদের উপর অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশিত দিন, মাস, ও বছর গণনা পদ্ধতির উপর কিন্তু বাস্তবে তার কোন অস্তিত্ত্ব নেই। ইসলামী বর্ষপঞ্চিটি সম্পূর্ণ আবেগতাড়িত যার সাথে পবিত্র কুরআনের কোন ধরণের সম্পৃক্ততা নেই। পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট হজ্জের মাস সমূহের কথা উল্লেখ থাকলেও তা বাস্তবে নেই। হজ্জের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয়গুলিকে বিভ্রান্তিকর অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ফলে হজ্জের মূলনীতি এবং উদ্দেশ্যকে অংকুরে-ই বিনষ্ট করেছে। পবিত্র কুরআন হজ্জ্বকে কোথাও কেবলমাত্র মুসলিমদের জন্য সীমাবদ্ধ রাখেন নাই বরং পৃথিবীর সকল মানুষকে আহ্ববানে করা হয়েছে। তাই হজ্জ্বকে মুসলিমদের জন্য ফরজ ইবাদত বলে একটি স্তম্ভ হিসাবে দাঁড় করিয়ে দেয়া পবিত্র কুরআন সম্পর্কে অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু নয়। সিয়াম (রোজা) যে হিসাবে মাসকে গণনা করা হয় তা বিভ্রান্তিকর এবং ইফতার ও সেহরির সময় সম্পর্কে লাহওয়াল হাদিস থেকে যে মতবাদ নেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ পবিত্র কুরআন পরিপন্থী।
পরিশেষে যে কথাটি দিয়ে শেষ করব তা হচ্ছে ইসলাম কোন পঞ্চ স্তম্ভের উপর নির্ভরশীল নয়। ইসলামের কেবলমাত্র একটি স্তম্ভ তা হচ্ছে পবিত্র কুরআন। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনকে বিশ্বের সকল মানুষের জন্য পাঠ্য বই হিসাবে রচনা করে দিয়েছেন। অনেকবার আল্লাহ বলেছেন যারা জানে আর যারা জানে না তারা সমান নয়। অনেক আয়াতে বলেছেন যেখানে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে চিন্তার বিষয়। অর্থাৎ মহান আল্লাহ সকল মানুষকে একরকম মেধা শক্তি দেন নাই। তাই একজন কম মেধার মানুষকে প্রথমেই বলে দিলেন ঈমান আনার জন্য। এখন ঈমান অধ্যায় দেখলাম ঈমান রাখতে হলে ৫১টি চলক মেনে চলতে হবে। আর এই ৫১টি চলকের রয়েছে নিজস্ব চলক সমূহ, যেমন ঈমানদারকে সালাত কায়েম করতে হবে আর সালাতের পেয়েছি ৯৫টি চলক। বাকি ৫০টির সাথে এভাবেই চক্রটি গড়ে উঠে। আর এভাবেই একজন ঈমানদার পবিত্র কুরআনের একটি শব্দের বাইরে যেতে পারবেন না। তাই সম্পূর্ণ পবিত্র কুরআন হচ্ছে একটি মাত্র স্তম্ভ।
Files
Book with Cover.pdf
Files
(4.2 MB)
Name | Size | Download all |
---|---|---|
md5:d2d371f3781bde00a9e4e2cf769688d8
|
4.2 MB | Preview Download |