পবিত্র কোরানের আলোকে বর্ষপঞ্জি ও প্রচলিত পদ্ধতি (Calendar: The conventional methods and in the light of the Holy Quran)
Creators
Description
মুখবন্ধ
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন,
"নিশ্চয় কোন মাসকে পিছিয়ে দেয়া কুফরী বৃদ্ধি করে, এর দ্বারা কাফিররা পথভ্রষ্ট হয়, তারা এটি এক বছর হালাল করে এবং আরেক বছর হারাম করে, যাতে তারা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তার সংখ্যা ঠিক রাখে। ফলে আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তা তারা হালাল করে। তাদের মন্দ আমলসমূহ তাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। আর আল্লাহ কাফির কওমকে হিদায়াত দেন না।" (৯:৩৭)
এই আয়াত আমাদের বলে দেয় শুধুমাত্র খাবার আর পোষাকের মধ্যেই হালাল-হারাম সীমাবদ্ধ নয়। বরং সময়, দিন, রাত, সপ্তাহ, মাস ও বছর গণনার ক্ষেত্রে রয়েছে সর্বোচ্চ হালাল-হারামের বিধিবদ্ধ বিধান। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান সর্বোচ্চ হালাল-হারাম বলছে এই কারণে যে, এর সাথেই সম্পৃক্ত রয়েছে ইসলামের মৌলিক বিধিবিধান যথা নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাত ও জিহাদ।
আমাদেরকে আল্লাহ একটি মাত্র মাসের নাম অর্থাৎ রমাদান হিসাবে উল্লেখ করে দিয়েছেন এবং বলে দিয়েছেন এই মাসেই লাইলাতুল কদরে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়। রাতটির কিছু সংক্ষিপ্ত বর্ণনাও দিয়েছেন যেমন
"শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত। " (৯৭:৫)
সেই রাতটি কি কখনো ঘন অন্ধকার হতে পারে? কারণ
"আর অন্ধকার রাতের অনিষ্ট হতে যখন তা আচ্ছন্ন হয়ে যায়।" (১১৩:৩)
যদিও দেখা যায় কিছু কিছু বিশেষজ্ঞদের মতামত তেমন একটি বা একধিক রাতের সম্ভাবনার কথা বলেন। কোন গভীর অন্ধকার রাত এই মহান গ্রন্থ নাজিলের রাত হতেই পারে না। তাই মনে হচ্ছে সহস্র বছরে মুসলিম সমাজ সেই মহিমান্বিত রাতটি চিরতরে হারিয়ে ফেলেছে। আমাদেরকে সেই একটি মাস বলে দিয়েছে এবং ১২ মাসে বছরের কথাও বলে দিলেন এবং তারমধ্যে চারটি মাসকে হারাম করে দিলেন বিশ্ব পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা কবজ হিসাবে। আল্লাহ এই দায়িত্ত্ব দিয়ে দিলেন জ্ঞানী শ্রেণীর কাছে।
পবিত্র কোরআন অনুযায়ী নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাত ও জিহাদের ইব্রাহিম (আঃ) থেকেই দেখা যায়। তাই সেই সময় থেকেই সময় গণনার বর্ষপঞ্জি থাকার-ই কথা। তাছাড়া মহান আল্লাহ আমাদের বলে দিয়েছেন সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে-ই ১২টি মাস নির্ধারিত (৯:৩৬), তাই প্রচলিত বর্ষপঞ্জিটির সাথে ইব্রাহিম (আঃ) বর্ষপঞ্জির সাথে অবশ্যই সম্পৃক্ততা থাকার কথা। ধরে নিলাম নাইবা থাকল, বিকৃত অথবা হারিয়ে গেছে। মুসা (আঃ) ও হারুন (আঃ) কে মহান আল্লাহ বলে দিলেন "আর আমি মূসা ও তার ভাইয়ের কাছে ওহী পাঠালাম যে, ‘তোমরা তোমাদের কওমের জন্য মিসরে গৃহ তৈরী কর এবং তোমাদের গৃহগুলোকে কিবলা বানাও আর সালাত কায়েম কর এবং মুমিনদের সুসংবাদ দাও।" (১০ : ৮৭) অর্থাৎ ইমরান (আঃ) পুত্রগণ মুসা (আঃ), হারুন (আঃ), কন্যা মারইয়াম (আঃ) এবং তার পুত্র ঈসা (আঃ), তাছাড়াও যাকারিয়া (আঃ) এর পুত্র ইয়াহিয়া (আঃ) সমসামিয়ক নবী রাসূলগণ ইব্রাহিম (আঃ) এর নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাত ও জিহাদ পালন করেছেন। তাদেরকেও একটি বর্ষপঞ্জি অনুসরণ অথবা অনুমোদন/প্রবর্তন করতে হয়েছে। কারণ আল্লাহ বলেন
"পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য প্রকাশ এবং কূট ষড়যন্ত্রের কারণে। কূট ষড়যন্ত্র ওর উদ্যোক্তাদেরকেই পরিবেষ্টন করে। তাহলে কি তারা প্রতীক্ষা করছে পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রযুক্ত বিধানের? কিন্তু তুমি আল্লাহর বিধানের কখনও কোন পরিবর্তন পাবেনা এবং আল্লাহর বিধানের কোন ব্যতিক্রমও দেখবেনা।" (৩৫:৪৩)
বিভিন্ন ধরনের সীরাত ও ইসলামের ইতিহাস থেকে দেখা যায় মোহাম্মদ (সঃ) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। প্রচলিত ধারণা মতে, তিনি ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট বা আরবি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ জন্মগ্রহণ করেন। প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা মন্টগোমারি ওয়াট তার পুস্তকে ৫৭০ সাল উল্লেখ করেছেন; তবে প্রকৃত তারিখ উদ্ঘাটন সম্ভব হয়নি। তাছাড়া মুহাম্মাদ (সঃ) নিজে কোনো মন্তব্য করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি; এজন্যই এটি নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে। এমনকি মাস নিয়েও ব্যাপক মতবিরোধ পাওয়া যায়। যেমন, একটি বর্ণনায় এটি ৫৭১ সালের ২৬ এপ্রিল বা রবিউল আউয়াল মাসের ৯ তারিখ হবে; সাইয়েদ সুলাইমান নদভী, সালমান মনসুরপুরী এবং মোহাম্মদ পাশা ফালাকির গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত প্রাপ্তির পরবর্তী ২২ বছর নিশ্চয়-ই একটি বর্ষপঞ্জি প্রণয়ন/অনুমোদন/অনুসরণ করেছেন। সেই বর্ষপঞ্জি কেন-ই বা পরিবর্তন করতে হল ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর শাসন আমলে?
সীরাত ও ইসলামের ইতিহাস থেকে দেখা যায় যে, ১৭ হিজরি সনে (৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ), বসরায় নিযুক্ত খলিফা উমরের একজন কর্মকতা আবু মুসা আশয়ারী উমরের কাছ থেকে প্রাপ্ত চিঠিপত্রে বছরের অনুপস্থিতির অভিযোগ করেছিলেন ও কোন নির্দেশাবলী বর্তমান বছরের তা নির্ধারণ করা তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছিল। এই প্রতিবেদনটি উমরকে মুসলিমদের জন্য একটি পঞ্জিকা সাল প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত করেছিল। পরামর্শদাতাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে প্রথম বছরটি হতে হবে মুহাম্মদ (সঃ) এর মদিনায় আগমনের বছর (যা আগে ইয়াসরিব নামে পরিচিত ছিল)। এরপর উসমান ইবন আফফান প্রাক-ইসলামি যুগের আরব্য রীতি মেনে বছরের প্রথম মাস মুহররমে শুরু করার পরামর্শ দেন। ইসলামি বর্ষপঞ্জির বছরগুলি এভাবে মুহররম মাস থেকে মুহাম্মদ (সঃ) এর মদিনা শহরে আগমনের বছর থেকে শুরু হয়, যদিও প্রকৃত হিজরত হয়েছিল আন্তঃকালিত বর্ষপঞ্জির সফর ও রবিউল আউয়াল মাসে তথা নতুন স্থির বর্ষপঞ্জির মুহররম শুরু হওয়ার দুই মাস আগে। হিজরতের কারণে এই বর্ষপঞ্জির নামকরণ করা হয় হিজরি বর্ষপঞ্জি। তবে পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত বিধিবিধানগুলিকে আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণা করে বিবেচনা করা হয় নাই।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের বলেছেন
"তিনিই সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময় এবং চাঁদকে আলোময় আর তার জন্য নির্ধারণ করেছেন বিভিন্ন মনযিল, যাতে তোমরা জানতে পার বছরের গণনা এবং (সময়ের) হিসাব। আল্লাহ এগুলো অবশ্যই যথার্থভাবে সৃষ্টি করেছেন। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন।" (১০:৫)
তিনি আরো স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন
"সেটা এমন এক উম্মত যা বিগত হয়েছে। তারা যা অর্জন করেছে তা তাদের জন্যই, আর তোমরা যা অর্জন করেছ তা তোমাদের জন্যই। আর তারা যা করত সে সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না। (২:১৩৪)
আল্লাহর কিতাব পবিত্র কোরআন ছাড়া বাকি সব আহলে কিতাব বা মানব রচিত কাহিনী। আল্লাহ আমাদের মধ্যে যাদের জ্ঞান দিয়েছেন তাদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য দিয়েছেন। বার বার চিন্তা ও গবেষণার কথা বলেছেন। তাই আমাদের উচিত প্রচলিত বর্ষপঞ্জিটি উপসংহারে বর্ণিত অনুকল্প (Hypothesis) গুলি পরীক্ষা করা।
ড. কাজী আব্দুল মান্নান
Files
Book Full-পবিত্র কোরানের আলোকে বর্ষপঞ্জি ও প্রচলিত পদ্ধতি-Online Version.pdf
Files
(1.1 MB)
Name | Size | Download all |
---|---|---|
md5:c1b64486b831d6ea823d66f5e0704f81
|
1.1 MB | Preview Download |