রাজা রামমোহন রায়ের উদারনৈতিক চিন্তা
Creators
Description
রাজা রামমোহন রায়কে ভারতের নবজাগরনের অগ্রদূত বলা হয়। বাংলা তথা ভারতে উদারনৈতিক চিন্তা ভাবনার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নেন। রাজা রামমোহন রায় ১৭৭২ সালে হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে সম্ভ্রান্ত জমিদার ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি প্রতিবাদী ছিলেন। মাত্র ষোলো বছর বয়সে তিনি মূর্তিপূজার বা পৌত্তলিকতার বিরোধিতা করে ঘর-ছাড়া হন। বিভিন্ন ধর্মের কু-সংস্কার, অন্ধবিশ্বাসের প্রতি তিনি ছিলেন বিরোধী। তিনি সব-সময় বিজ্ঞানসম্মত চিন্তাভাবনা, আলোচনার প্রতি সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। জন ডিগবীর সাথে তাঁর কাজের সূত্রে পরিচয় হয়। ডিগবী সাহেবের সান্নিধ্যেই তিনি পরিচিত হন ইউরোপের উদারনৈতিক মতবাদের সাথে। ডিগবি সাহেরবর কাছে আসা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা পঠনের মধ্যে দিয়ে তিনি অনুপ্রাণিত হন উদারনৈতিক চিন্তনে। পরাধীন ভারতের ছন্ন-ছাড়া, লক্ষ্য-উদ্দেশ্যহীন ভাবে থাকা সাধারণ মানুষকে পশ্চিমী উদারনৈতিক চিন্তা-ভাবনার আলোকে আলোকিত করতে চেয়েছিলেন। যার জন্য তিনি নিজে সংস্কৃতে সু-পণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও ইংরেজী শিক্ষার জন্য ১৮২০ সালে লর্ড আর্মহাস্টর্কে চিঠি লিখেছিলেন। কারণ তিনি জানতেন এই উদারও আলোপ্রাপ্ত শিক্ষার মধ্য দিয়েই ভারতবাসীরা উজ্জীবিত হবে। তিনি চেয়েছিলেন ভারতে আইনের অনুশাসনের প্রতিষ্ঠা হোক। যার মধ্যে দিয়ে আইনের দৃষ্টিতে সাম্যের বিষয়টিকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। তিনি লক্ষ করেছিলেন ভারতে উচ্চপদস্থ সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে যোগ্য ভারতীয়দের বাদ দিয়ে অযোগ্য ইংরেজদের নিয়োগ করতে। প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি সাম্যনীতির বিষয়টি উপস্থাপন করেন। রাজা রামমোহন রায় চেয়েছিলেন যে, ভারতে আইন প্রণেতা ও প্রয়োগকারী যেন আলাদা হয়। এক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভারতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্যর প্রতি আলোকপাত করতে হবে। ১৮২৩ সালে জন অ্যাডম ভারতে সংবাদপত্র প্রকাশনার ক্ষেত্রে কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করার ফলে তিনি দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর সহ বিশিষ্ট কিছু ব্যক্তির স্বাক্ষর নিয়ে কলকাতার সুপ্রিম কোর্টের কাছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে আর্জি করেন। এর প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি মিরৎ-উল আখবরের প্রকাশনা বন্ধ করে দেন। তিনি ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। প্রত্যেক ভারতীয় যাতে ইংরেজ শাসনে সু-বিচার পায় তার জন্য তিনি সচেষ্ট হয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন ভারতের রাজনৈতিক অধিকারের থেকে বেশি প্রয়োজন পৌর অধিকারের। ভারতের কোম্পানীর একচেটিয়া বাণিজ্যের একাধিপত্যের অবসানের জন্য তিনি অবাধ বাণিজ্যের কথা বলেছেন, এবং অবশ্যই তিনি চেয়েছিলেন যারা বাণিজ্য করতে আসবে সেই সমস্ত ইউরোপীয়রা হবে শিক্ষিত ও ভদ্র। ভেঙে পড়া ভারতীয় সমাজ থেকে কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, জাতি ভেদপ্রথা দূর করার জন্য তিনি সচেষ্ট হয়েছিলেন। ১৮২৯ সালে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সাহায্য ও সহযোগিতায় হিন্দু সমাজের নারকীয় ও বর্রোরোচিত ‘সতীদাহ প্রথা’কে চিরতরে অবলুপ্ত করতে পেরেছেন। বাংলা তথা ভারতীয় নবজাগরনের পুরোধা হিসাবে তিনি আমাদের কাছে পরম পূজনীয় হয়ে থাকবেন।
Files
MRR20253210.pdf
Files
(320.8 kB)
Name | Size | Download all |
---|---|---|
md5:88c58cbe746621a1de857747648e85d6
|
320.8 kB | Preview Download |