চিন্তা ও গবেষণায় পবিত্র কোরআন
Creators
- 1. Chairperson, Center for Academic & Professional Career Development and Research (CAPCDR)
Description
চিন্তা-ভাবনা ও বিবেক এই সকল মনস্তাত্বিক বিষয়গুলি মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট, যা মানুষ ধারণ করে আসছে সৃষ্টির শুরু থেকেই। চিন্তা-ভাবনা করা মানবতার একটি অপরিহার্য কার্যকলাপ, একে সংজ্ঞায়িত বা এটা বোঝার কোনো সাধারণ ঐক্যমত্য নেই। যেহেতু চিন্তা মানুষের অনেক কর্ম এবং মিথস্ক্রিয়ার কারণ এবং প্রভাব বোঝার চেষ্টা ভাষাবিদ্যা, মনোবিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান, দর্শন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জীববিদ্যা, সমাজবিজ্ঞান এবং সংজ্ঞানাত্মক বিজ্ঞান সহ অনেক পান্ডিত্যশাখার দীর্ঘদিনের লক্ষ্য হয়ে আছে। চিন্তা করার ফলে মানুষ অনুভূত দুনিয়া জানা, ব্যাখ্যা, চিত্রিত করা, নকশা বানানোতে এবং সেই সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে সাহায্য করে। সুতরাং চাহিদা, উদ্দেশ্য এবং ইচ্ছা একটি প্রাণীর সহায়ক কারণ এতে সে পরিকল্পনা করে বা এই লক্ষ্যে সাধন করার প্রচেষ্টা করে।
আর আমরা মনে করি গবেষণা শব্দটি এসেছে মধ্য ফরাসি "রিচের্চে (recherche)" থেকে, যার অর্থ "অনুসন্ধানে যাওয়া (to go about seeking)", যার প্রথম নথিভুক্ত ব্যবহার ছিল ১৫৭৭ সালে। বিশ্বের সবচেয়ে দশটি পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা কাল হচ্ছে ১০৮৮-১২৯০ সালের মধ্যে। আজ সারা বিশ্বে রয়েছে ত্রিশ হাজারের অধিক পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, তাছাড়াও রয়েছে নানা ধরণের উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ আজ আমরা যা শিখছি তার একমাত্র উৎস হচ্ছে চিন্তা-ভাবনা এবং গবেষণার ফসল। গবেষণায় দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা। অর্থাৎ সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করতে হলে আমাকে অবশ্যই গবেষণা বুঝতে ও শিখতে হবে এবং একটি বিশেষ শিক্ষায় উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ শেষেই কেবল এই স্তরে আসতে হয়, যা আমরা সকলেই অবগত।
আজ সকল জ্ঞানের একমাত্র উৎস হচ্ছে গবেষণা লব্ধ। এই গবেষণাই শিক্ষার মান বলে দিচ্ছে একটি দেশ, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান, তেমনি নতুন নতুন অর্জন নিয়ে পৃথিবী হচ্ছে সমৃদ্ধ। গবেষণার একজন ছাত্র হয়ে অনেক খুঁজেছি এর মূল উৎস কোথায়। প্রকৃতঅর্থে , যে মহাগ্রন্থে রয়েছে গবেষণার ভান্ডার, আমরা তার উৎস থেকেই যে দিন দিন এগিয়ে চলছি অথচ তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি না। যদিও গবেষণা ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে উৎসের কৃতজ্ঞতা স্বীকারের নীতিগত এমনকি আইনগত বাধবাধকতা রয়েছে। হাঁ, আমি সেই মহান পবিত্র গ্রন্থের কথা বলছি যা হচ্ছে পবিত্র "আল-কোরআন" । যে গ্রন্থ নিজে বলেছে, "ইহা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই; ধর্ম-ভীরুদের জন্য এ গ্রন্থ পথনির্দেশ"[1]। অর্থাৎ ভুলতো চিন্তার বাইরে বরং সন্দেহের অবকাশ পর্যন্ত নেই। আর তা আমাদের অন্ধ ও বধিরের মত মেনে নিতে এমনকি অনুসরণ করতে বলা হয় নি, তা নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণার প্রয়োজনে দেশ বিদেশ ও গ্রহ গ্রহান্তরে ভ্রমণের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এই মহাগ্রন্থ আমাদের কাছে আসার অনেক পূর্বেই এর ভবিষৎবাণী ছিল এমন "[আর যখন মারইয়াম পুত্র ঈসা বলেছিল, ‘হে বনী ইসরাঈল, নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল। আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আসবেন, যার নাম আহমদ’। অতঃপর সে যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে আগমন করল, তখন তারা বলল, ‘এটাতো স্পষ্ট যাদু’]”[2] । আমার কাছে সত্যিই যাদুর মত মনে হচ্ছে, কারণ বিশ্বের নামি-দামি সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি এই মহা গ্রন্থকেই "গবেষণার মূলনীতি" হিসাবেই অঘোষিত ভাবে অনুসরণ করছে। আমার পক্ষে এই সংকলনে যতটুকু তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে, তা যাদু ছাড়া অন্য কিছু মনে হতে পারে বলে মনে হবে না।
আমরা জানি যে এই মহাগ্রন্থটি হচ্ছে আরবী ভাষায় রচিত যার কতিপয় আয়াত (মুহকাম) মৌলিক-সুস্পষ্ট অর্থবোধক, এগুলো হল কিতাবের মূল আর অন্যগুলো (মুতাশাবিহ) পুরোপুরি স্পষ্ট নয় (যার প্রকৃত অর্থ একমাত্র মহান আল্লাহই ভাল জানেন); তাই যাদের মাতৃভাষা আরবী তারাও বিশেষ করে মুতাশাবিহ ব্যাখ্যা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত নয়। সেই কারণে, যেহেতু অনুবাদের ক্ষেত্রেও অনুবাদকের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাস অনুবাদের সময় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। তাই এই সংকলনে তিনটি (আল-বায়ান, তাইসিরুল, ও মুজিবুর রহমান) অনুবাদ উপস্থাপন করা হল, যেন পাঠকের হৃদয়ের মাঝে নিজের অনুভূতিতে বুঝতে সক্ষম হয়। পবিত্র কোরআনের অনুবাদ নিয়েও কিয়ামত পর্যন্ত গবেষণা অব্যহত থাকবে।
এই সংকলনে মূলত গবেষণার মূলনীতি বিষয়গুলির উপর গুরুত্ত্ব দেওয়া হয়েছে, তাই গবেষণার বিষয়বস্তু অধ্যায় শুধুমাত্র কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। মূলত এই মহাগ্রন্থে এমন কিছু বাদ নেই, যা আজ পৃথিবীর নানা দেশে নানা ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় বিষয় ভিত্তিক স্থান পেয়েছে। আমি মনে করি এখনও এমন বিষয় রয়েছে, যা আমাদের অজানাই রয়ে গেছে। আশা করি বর্তমান বিশ্ব গবেষণার ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি সাধন করেছে, তার ফলে আমরা হয়ত অচিরেই অনেক দূর পর্যন্ত পৌঁছে যেতে সক্ষম হব, যা মানব সভ্যতাকে আরো বিকশিত করবে।
আমরা জানি ধর্ম একটি সংস্কৃতি ধৃ ধাতু + মন প্রত্যয় = ধর্ম । ধৃ ধাতুর অর্থ ধারণ করা । অর্থাৎ যে বস্তু যে বৈশিষ্ট ধারণ করে তা হচ্ছে ঐ বস্তুর ধর্ম। যেমন আগুন তাপ, বরফ শৈত্য ধারণ করে। মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব । যার মনুষ্যত্ব নেই, সে অমানুষ। আল-কোরআন কোন মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া ধর্ম নয়, বরং এই মহাগ্রন্থটি হচ্ছে সমগ্র মানব জাতির কল্যাণের উদ্দেশ্যে জ্ঞানের ভান্ডার। আমি মনে করি এই কোরআন যেভাবে রচিত হয়েছে এবং চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণার ক্ষেত্রে যে ধরণের দিক নির্দেশনা ও গুরুত্ত্ব দিয়েছে তাতে অনাগত ভবিষ্যতে মানুষ যা কিছু উপকরণ নিয়ে জীবন যাপন করবে, তা আমাদের এই প্রজন্মের চিন্তার বাইরে।
পরিশেষে যে কথাটা স্পষ্ট, এই পৃথিবীতে গবেষণার মূলনীতি হিসাবে এত সুস্পষ্ট লিখিতভাবে আদি কোন দ্বিতীয় গ্রন্থ নেই। আর আমি বিশ্বাস করি একজন গবেষকের কাছে এর চেয়ে মূল্যবান কোন গ্রন্থ ছিল না, বর্তমানেও নেই এবং ভবিষ্যতেও হবে না। কারণ বিশ্বের সকল বিজ্ঞানী যিনি সৃষ্টি করেছেন, সেই মহাবিজ্ঞানীই এর রচনা করেছেন মানবতার কল্যানেই।
আপনার মূল্যবান মতামত এবং তথ্য সূত্র “চিন্তা ও গবেষণায় পবিত্র কোরআন” সংকলকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারবে বলে আমি মনে করি।
[1] (২:২) সূরাঃ আল-বাকারা, আয়াত:২
[2] (৬১:৬) সূরাঃ আস-সফ, আয়াত:৬
Files
চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণায় পবিত্র কোরআন-Online Version.pdf
Files
(3.6 MB)
Name | Size | Download all |
---|---|---|
md5:186c80f7c6d626cfa8f01923102e3fae
|
3.6 MB | Preview Download |